Sofia, Odisha's First Ever Muslim MLA

 ওড়িশার প্রথম মুসলিম মহিলা বিধায়ক সোফিয়া 



ওড়িশায় ইতিহাস গড়লেন সোফিয়া ফেরদৌস। ওই রাজ্যে স্বাধীনতার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও মুসলিম মহিলা বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হননি। এই প্রথমবার মুসলিম মহিলা বিধায়ক পেল ওড়িশা। ইতিহাস লিখলেন যিনি, সেই সোফিয়া ফেরদৌস তার বাবার দখলে থাকা সিটেই জিতেছেন। সোফিয়ার বাবা মোহাম্মদ মকিম বারাবতী, কটক বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। কংগ্রেসী এই বিধায়ক এবারে নিজে না দাঁড়িয়ে কন্যা সোফিয়াকে এই আসনের জন্যে এগিয়ে দিয়েছিলেন। তার এই দাবি মেনে নিয়েছিল কংগ্রেস। তবে কংগ্রেসকে নিরাশ করেনি সোফিয়া। সেখানকার বিজেপি প্রার্থী পূর্ণচন্দ্র মহাপাত্রের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে ৮ হাজার ১ টি ভোটের মার্জিনে জিতেছেন সোফিয়া। 

এছাড়া-দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচনে অন্তত ১৫ জন মুসলিম প্রার্থী সফলভাবে নিম্নকক্ষে আসন দখল করেছেন। এই তালিকায় রয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার  ইউসুফ পাঠান, যিনি কংগ্রেস প্রবীণ বহরমপুর ঘাঁটিতে অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে সহজেই পরাজিত করেছেন।


সোফিয়া ফিরদৌস সম্পর্কে কিছু তথ্য 

৩২ বছর বয়সী সুফিয়া ফেরদৌস রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছেন।  মিস ফেরদৌস ভুবনেশ্বর কেআই আই টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি ২০২২ সালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট, ব্যাঙ্গালোর (আইআই এম-বি)থেকে একটি এক্সিকিউটিভ জেনারেল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম ও সম্পন্ন করেছেন।সোফিয়া ফেরদৌস কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা মোঃ মুকিমের মেয়ে,যিনি 2022 সালের সেপ্টেম্বরে দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে একই আসনের বিধায়ক ছিলেন। এবং তিনাকে দুর্নীতির মামলায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং 50 হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এবং ২০২৪ সালের এপ্রিলে ওড়িশা হাইকোর্ট সেই সাজা বহাল রাখে।তার পরিবর্তে ২০২৪ সালে উড়িষ্যা বিধানসভা নির্বাচনে মিসেস সোফিয়া ফেরদৌস কে নিয়োগ করেছিল। তবে, কংগ্রেস দল ও তার বাবাকে নিরাশ করেননি সোফিয়া ফেরদৌস। বারাবাতি কটক কেন্দ্রে বিজেপির পূর্ণচন্দ্র মহাপাত্র কে ৮ হাজার একটি ভোটের মার্জিনে পরাজিত করেছেন।

এবং তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনী অভিষেকের আগে,সোফিয়া ফেরদৌস তার বাবার মেট্রো বিন্ডাস কোম্পানির পরিচালক ছিলেন। তিনি কনফেডারেশন অফ রিয়েল এটেস্ট ডেভেলপার্স অ্যাসোসিয়েশনের  অফ ইন্ডিয়ার একটি অংশ ও। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনে হলফনামা জমা দেওয়া অনুযায়ী, সোফিয়া বিরুদ্ধে কোন ফৌজিদারী অভিযোগ নেই।তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই কে ফেরদৌস বলেন: কটকের মানুষ ভাতৃত্বে বিশ্বাস করেন এবং কটকের মানুষ প্রমাণ করে দিয়েছেন যে উন্নয়নের প্রশ্নে ধর্মের কোন জায়গা নেই। ধর্ম আমার কাছে পরম ক্ষমতা, ও অদৃশ্য শক্তির ইবাদতের মাধ্যম ছাড়া আমার কাছে পরম ক্ষমতা, ও অদৃশ্য শক্তির ইবাদতের মাধ্যম ছাড়া আর কিছুই নয়। এবং আরো বলেন যে, আমি বিশ্বাস করি হিন্দু মুসলিম, খ্রিস্টান এবং যেকোন সম্প্রদায়ের জন্য আধ্যাত্মিকতা অপরিহার্য। তাছাড়া আধ্যাত্মিকতা নিজেকে ঐক্যবদ্ধ রাখে। এবং নিজেদের মধ্যে শক্তি জোগায়।

উড়িষ্যার প্রথম মুসলিম মহিলা বিধায়ক হওয়ার পর সোফিয়া ফেরদৌস বলেন: প্রথমত আমি একজন গর্বিত ওড়িয়া এবং ভারতীয়। এছাড়া আরো বলেন যে, ওড়িশা বিধানসভায় প্রায় ৯০ বছরের ইতিহাসে ১৪০ জনেরও বেশি মহিলা নির্বাচিত হয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে কোন মুসলিম মহিলা ছিলেন না। তাই উড়িষ্যার প্রথম মুসলিম মহিলা বিধায় হয়ে আমি ধন্য। এসবের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।

উড়িষ্যা রাজনীতিতে প্রথম মুসলিম মহিলা বিধায়ক সোফিয়া ফেরদৌস বলেন:-তার আদর্শ রাজনীতিবিদ হলেন নন্দিনী শতপথী, যিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত উড়িষ্যার কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এবং ফেরদৌসী বলেন সে তিনার থেকে উৎসাহিত হয়েছেন।

বিধানসভা নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ের পর সোফিয়া ফেরদৌস বলেন:- আমি একজন ওড়িয়া একজন ভারতীয় এবং সবার আগে একজন নারী। রিয়েল এস্টেটে আমার ক্যারিয়ার এবং পেশাগত জীবনে নারীর ক্ষমতায়ের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি,এবং আমি রাজনীতিতেও তা অব্যাহত রাখব।

নির্বাচনে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ

রাজনীতিতে মেয়েদের উত্থান কঠিন। পৃথিবীর বহু দেশে সেই নেতা হিসাবে মহিলাদের গ্রহণযোগ্যতা এখনো কম। দলের মতাদর্শগত অবস্থান যাই-হোক, তার অন্তরে গুরুত্ব আদায় করে নিতে একটি মেয়েকে আজও অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। রাজনীতি হল বাইরের জগৎ, ঘরের মহিলাদের এসব বিষয়ের নাক গলানো অনুচিত - বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ভারতে এমন মত পোষণ করেন বহু মানুষ। গ্লোবাল জেন্ডার গ্রাপ রিপোর্ট অনুযায়ী, লিঙ্গসাম্যের নিরিখে ১৪৮ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১২৯ তম । এর একটা বড় কারণ হলো আইন সভায় মেয়েদের প্রতিনিধিত্বের শোচনীয় পরিসংখ্যান।

১৯৫৭ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের তিন শতাংশেরও কম ছিলেন।  ২০২৪ এ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০% আশপাশে । বর্তমানে লোকসভায় নির্বাচিত সংসদদের মধ্যে মহিলা ৯৪ জন, শতাংশের হিসাবে যা ১৩.৬   ২০১৯- এর তুলনায় সামান্য কম। লোকসভা নির্বাচনে মেয়েদের জন্য আসন সংরক্ষণ নিয়ে বিতর্ক চলছে বহু কাল ধরেই।

বস্তুত লোকসভা ও বিধানসভায় এক - তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে । এই মর্মে ২০২৩ সালে একটি আইন ও পাস হয় । তবে হাতে কলমে সেই আইনের প্রয়োগ এখনও অসম্পূর্ণ। অনুমান ২০২৯ এর লোকসভা নির্বাচনে মহিলাদের আসন সংরক্ষণ এর স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

এছাড়াও দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচনে অনেক মুসলিম মহিলা প্রার্থী সফলভাবে নিম্ন কক্ষে আসন দখল করেছেন। বর্তমান ভারতবর্ষে মুসলমানের ওপর যে  অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে, সেটাকে থামাবার এক মাত্র উপায় হচ্ছে মহিলাদের কে রাজনীতিতে এগিয়ে আনা। এবং তাদের কে শিক্ষা দেওয়া যাতে তারা মুসলিমদের ওপরে যে অত্যাচার হচ্ছে তার প্রতিবাদে তারা যেন  আওয়াজ উঠায়।


বিঃদ্রঃ  এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব এবং তা আবশ্যিকভাবে সম্পাদকীয় অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না।


Comments